অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্যাসিনো ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা এবং অর্থপাচারের অভিযোগে চট্টগ্রাম পটিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার পরিবারের ছয় সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২ অক্টোবর এই তদন্ত প্রক্রিয়া আবারও সক্রিয় হয়, যা এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর আগেও সামশুল হকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে অনুসন্ধান হলেও তিনি একাধিকবার দায়মুক্তি পেয়েছেন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন, সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের একাধিক ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে কোন ব্যাংকে কত অর্থ রয়েছে তা বিস্তারিত জানানো হয়নি।
দুদকের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে যাদের হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে তারা হলেন: সামশুল হক চৌধুরী (সাবেক এমপি ও হুইপ),তার স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী, ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, মেয়ে তাকলিমা নাছরিন চৌধুরী ও তাহমিনা নাসরিন চৌধুরী, ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত ও মজিবুল হক চৌধুরী নবাব, ক্যাসিনো অভিযান ও পুরনো অভিযোগ ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পরই সামশুল হক চৌধুরীর নাম আলোচনায় আসে। অভিযোগ ছিল, তিনি চট্টগ্রামে ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে এবং একই বছরের ২৩ অক্টোবর ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার মধ্যে সামশুল হকও ছিলেন। তবে চার বছর পর, ২০২৩ সালের ৮ মে দুদকের তৎকালীন সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দাবি করা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
তদন্তের গতি হারানোর অভিযোগ: দুদকের আগের অনুসন্ধান নিয়ে সমালোচনা আছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল ছাড়াই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামশুল হকের মতো প্রভাবশালী রাজনীতিকদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেই দায়মুক্তি দেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। এদিকে, তার বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া পুলিশেরই একজন কর্মকর্তা—পরিদর্শক সাইফ আমিন পরে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হন, যা বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে।
আত্মগোপনে সাবেক এমপি ও পরিবার সর্বশেষ তথ্যমতে, সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন ইতোমধ্যে দুবাই পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, পরিবারের অন্যান্য সদস্য—স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই ভাই যশোর সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।