প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লবণ
প্রকাশের সময়:
সোমবার ২২ মে ২০২৩ ০৫:২৬:০০অপরাহ্ন

প্যাকেটকৃত ৬২ শতাংশ খাবারে বেশি মাত্রায় লবণ

বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে অন্তত একবার প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবার গ্রহণ করে। আর এসব খাবারে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লবণ। এ কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন।

আজ রোববার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে লবণ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং রিসলভ টু সেইভ লাইভসের (আরটিএসএল) সহযোগিতায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিকাল রিসার্চ) ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান। তিনি বলেন, এক হাজার ৩৯৭ ধরনের প্রক্রিয়াকৃত প্যাকেটকৃত খাবার দেশের বাজারে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৫ ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবার ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে অধিকমাত্রায় লবণ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ খাবারে অত্যাধিক এবং ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ খাবারে বেশি, তবে তুলনামূলক কম অতিরিক্ত লবণ রয়েছে। আর ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে সঠিক মাত্রায় লবণ রয়েছে।

তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাজারে থাকা খাবারের প্যাকেটগুলোতে যে লেবেল থাকে, সেখানে সঠিক তথ্য দেওয়া থাকে না। অনেক কোম্পানি খাদ্যপণ্যের উপাদানের সঠিক মাত্রা লুকিয়ে বাজারজাত করেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হন।

মতবিনিময় সভায় বিএসটিআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর এনামুল হক বলেন, নগরায়নের জীবনে আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা কষ্টকর। তাই এই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বাঁচতে আমাদের সচেতন হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। তারপরও সাধারণ মানুষ এটি গ্রহণ করছে। এর মূল কারণ সচেতনতার অভাব। তাই ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। এজন্য প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারের ‘ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং’ অর্থাৎ সামনের দিকে পণ্যের খাদ্য উপাদানের তথ্য থাকতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খাদ্যে লবণ ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো আইন নেই। তাই সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ক্ষতিকর দিকসমূহ জানাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

মতবিনিময় সভার সভাপতি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বলেন, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে লবণের সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। প্যাকেটের সামনে লেবেল ঠিক করে দেওয়া। খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ নিয়ে বড় আকারে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে লবণ খাওয়ার ভুল ধারণাসমূহকে বাদ দিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের ক্যান্ট্রি লিড-বাংলাদেশ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা. ইউনুছুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খালেদা ইসলাম, বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথোরিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (নিউট্রিশন) ফারিয়া শবনব ও ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি ) ডা. ফারজানা আক্তার ডরিন, জাতীয় পুষ্টিসেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফাতেমা আক্তারসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।



আরও খবর