প্রকাশের সময়:
বৃহস্পতিবার ২ জুন ২০২২ ০২:৫৩:০০অপরাহ্ন

ইতালিকে হারিয়ে আরেক শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা

দুই মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নের শিরোপা লড়াইয়ের শ্রেষ্ঠত্বের নাম ফিনালিসিমা। তবে হাসিমুখে ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরলো মেসির আর্জেন্টিনাই।

ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আলবিসেলেস্তরা। দুই অ্যাসিস্টে ম্যাচ সেরা লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকার জয়ের বছরেরও কম সময়ে আরও একটি শিরোপা ঘরে তুলল আর্জেন্টিনা।

বুধবার (১ জুন) রাতে গোলগুলো করেন লাউতারো মার্টিনেজ, অ্যাঞ্জেলো ডি মারিয়া ও পাওলো দিবালা।

একটি শিরোপার জন্য কতই না হাহাকার ছিলো লিওনেল মেসির। গেলো বছর কোপা আমেরিকা জয় করে সে আক্ষেপ ঘুচিয়েছিলেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে আরও একবার শিরোপা উৎসব। এবার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে। ল্যাতিন আমেরিকার পর ইউরোপও জয় করলেন লিওনেল মেসি। নিজের সাম্রাজ্য বড় করে চলা এ আর্জেন্টাইন মহাতারকা যেনো এ যুগের আলেকজান্ডার দি গ্রেট। 

আর ইতালি! এক বছর আগে এই ওয়েম্বলিতে ইউরো জয় করেছিলো আজ্জুরিরা। সেখানেই লজ্জার পরিণতি। আর্জেন্টিনার কাছে যে পাত্তাই পায়নি ইউরোপ সেরারা। অন্তত এ ম্যাচের পর বিশ্বকাপের টিকেট না পাওয়াটাও যে এখন আর অবাক করছে না।

খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় ইতালির ওপর একপ্রকার আধিপত্য বিস্তারই করেছে আর্জেন্টিনা।

ফিনালিসিমার শুরু থেকেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের আশপাশ চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দখলে। ৯০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামের একটা আসনও ফাঁকা যায়নি।

শুরুটা আর্জেন্টিনা করেছিল দুর্দান্ত। বলের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে আক্রমণের পসরাই সাজিয়ে বসেছিল। তবে ইতালিও শুরুর নড়বড়ে ভাবটা কাটিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় শুরুর দশ মিনিট পেরোতে। প্রথম শট অন টার্গেট, প্রথম বড় সুযোগটাও তৈরি করেছিল দলটিই।

 লিওনেল স্ক্যালোনির অধীনে আর্জেন্টিনা আর যাই হোক, রক্ষণে যে বেশ শক্তপোক্ত, তার প্রমাণ মিলেছে গেল কোপা আমেরিকাতেই। তার প্রমাণ ওয়েম্বলিতেও দিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ আর ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোরা। এমি মার্টিনেজ একটা দারুণ শট ঠেকালেন শুরুতে, ম্যাচের ২০তম মিনিটে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে তৈরি করা বড় সুযোগটাও শেষ মুহূর্তের ট্যাকলে ঠেকিয়ে দিয়েছেন রোমেরো।

মেসি সেই সুযোগটাই নিলেন কয়েক মিনিট পরে। ২৮ মিনিটে জিওভানি ডি লরেঞ্জোর কড়া পাহারা এড়িয়ে বাম পাশ থেকে আক্রমণে উঠে বল বাড়ান মাঝে থাকা লাওতারো মার্টিনেজের উদ্দেশ্যে। সহজ ট্যাপ ইনে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লাওতারো। তাতেই ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচের চিত্রটাই বদলে দেয় আর্জেন্টিনা। এর আগের ১০-১৫ মিনিটে যে পরিস্থিতিটা একটু বিরূপই হয়ে গিয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের জন্য!

এক গোলের লিড নিয়ে যেন স্বস্তিতে থাকতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তাই এগিয়ে গিয়েও কমায়নি আক্রমণের তেজ। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়ে ইতালিও খুঁজতে থাকে গোলের সুযোগ। ম্যাচের ৩৯ মিনিটের মাথায় মেসিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ইতালির লেওনার্দো বনুচ্চি।

সেই বনুচ্চির সামনে দিয়েই হয় দ্বিতীয় গোলের আক্রমণের সূচনা। মার্টিনেজকে আটকানোর দায়িত্বে ব্যর্থ হন বনুচ্চি। বল নিয়ে সোজা ওপরে উঠে যান মার্টিনেজ, তাকে সহায়তা করতে ডান দিক দিয়ে ওপরে ওঠে ডি মারিয়াও।

ডি-বক্সের কাছে গিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ডি মারিয়ার উদ্দেশ্যে বল এগিয়ে দেন মার্টিনেজ। সেই বল থেকে আলতো চিপ করে ডনারুম্মার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান ডি মারিয়া। এই গোলে বিরতিতে যাওয়ার আগে স্বস্তি খুঁজে পায় আর্জেন্টিনা।

 দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় ছিল গোলশূন্য। খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর দেয়া হয় অতিরিক্ত চার মিনিট। এর প্রথম মিনিটে ডি মারিয়া ও লো সেলসোকে তুলে নিয়ে দিবালা ও নিকোলাস গঞ্জালেজকে নামান স্কালোনি। মাঠে নেমে আড়াই মিনিটের মধ্যেই জালের ঠিকানা খুঁজে নেন দিবালা।

গোলের দেখা না পেলেও পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। অল্পের জন্য কয়েকবার গোলবঞ্চিত হয়েছেন তিনি। তবে জোড়া অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি।

১৯৯৩ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে হারিয়ে আর্জেন্টিনা সবশেষ ফিনালিসিমা জয় করেছিলো দিয়াগো ম্যারাডোনার হাত ধরে। ২৯ বছর পর আবারও মহাদেশীয় ট্রফি ঘরে তুললো তারই উত্তরসূরী লিওনেল মেসি। 

 



আরও খবর