গত জুলাইতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন চ্যানেল আইয়ে আয়োজিত ‘টু দ্য পয়েন্ট’ টকশো-তে উপস্থাপক দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দিয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এমন আচরণের কারণে সেই সময়ে নিন্দিত হন সাবেক এই বিচারপতি।
সেই একই ভিডিওটিতে দেখা যায়, দীপ্তি চৌধুরী নিজেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান’ উল্লেখ করে বিচারপতি মানিকের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করছিলেন। দীপ্তির এই দৃঢ়তা সেই সময়ে হয় নন্দিত। এমনকি দীপ্তির এমন তেজদীপ্ত আর বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ছুঁয়ে যায় জুলাই আন্দোলনকে!
সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছেন দীপ্তি। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দীপ্তির দাবি করা ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান’ কথাটিকে অনেকে চ্যালেঞ্জ করছেন! শুধু তাই নয়, এ নিয়ে দীপ্তিকে কটাক্ষ করে ছড়ানো হচ্ছে বহু গুজবে খবর! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দীপ্তি চৌধুরীকে ট্রলিং-এর মাধ্যমে বুলিং করা হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে দীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, “আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন”।
কথিত ফটোকার্ডটির কোনো সত্যতা নেই বলে ডেইলি স্টার-এর পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
ত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীপ্তি চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “দীপ্তি চৌধুরী, আপনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বলেছেন। আপনার পরিবারের কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? কোন সেক্টরে? নাম কি? আপনার সঙ্গে সম্পর্ক কি? সহজ বিষয়। এই সহজ উত্তর দিতে আপনার দেরি হচ্ছে কেন?”
দীপ্তিকে নিয়ে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে, বিষয়টি জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে নানান তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে দীপ্তি চৌধুরীর পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে তার পরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনটি জানানো হয়, দীপ্তির দাদার বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে। এ তথ্যের সত্যতা পত্রিকাটির স্থানীয় প্রতিবেদক ফরিদ রায়হান সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে তুলে ধরেন।
দীপ্তি চৌধুরীর পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ফরিদ রায়হান জানান, দীপ্তি চৌধুরীর বাবার নাম শিবলী চৌধুরী। দীপ্তি চৌধুরীর দাদার নাম নুরুল ইসলাম চৌধুরী, তিনি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নুরুল ইসলাম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বোনের কোনো সন্তান না থাকায় তার কাছেই বেড়ে ওঠেন দীপ্তি চৌধুরীর বাবা শিবলী চৌধুরী। পরে বোনের পরিবার শিবলী চৌধুরীকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন।

ফরিদ রায়হান জানান, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শিবলী চৌধুরীর দুই চাচা (নুরুল ইসলাম চৌধুরীর চাচাতো ভাই) কুতুব উদ্দীন চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী সরকারের সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে কুতুব উদ্দীন চৌধুরী আদমপুর দেওয়ান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং বর্তমানে অবসরে আছেন। গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী প্রয়াত।
অষ্টগ্রাম উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় কুতুব উদ্দীন চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দীন চৌধুরীর নাম পাওয়া যায়। তাদের আইডি নম্বর যথাক্রমে ০১১৭০৭০০০১২ ও ০১১৭০৭০০০২।
সাম্প্রতিক গুঞ্জন নিয়ে রবিবার রাতে দীপ্তি গণমাধ্যমকে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইক নিউজের ছড়াছড়ি। সত্যের পক্ষে থেকে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। খারাপ মানুষরা ঐক্যবদ্ধ। তারা খারাপ বিষয়গুলো দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু ভালো মানুষের ঐক্যবদ্ধতা তুলনামূলক কম থাকায় আওয়াজ তুলতে দেরি হয়। অনলাইনে যে হ্যারেজমেন্ট শুরু হয়েছে সচেতন নাগরিকদের সকলের আওয়াজ তোলা উচিত। এক্ষেত্রে মিডিয়া সত্যের পক্ষে থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”