শনিবার ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২৬:০০অপরাহ্ন
কানাডীয় টিভি ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে কানাডায় দেখা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায় এই আসামিকে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) সিবিসি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দ্য ফিফথ স্টেট’-এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হয়।
প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে দেখানো হয়। এছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় দেখা গেলেও প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান তিনি।
তারা প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, দীর্ঘদিন অনুসরণ করে কানাডার টরন্টো থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এলাকা ইটোবিকো থেকে তাকে খুঁজে বের করা হয়েছে। সেখানে একটি কনডোমিনিয়ামের তিনতলায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। ৭০ বছর বয়সী নূর চৌধুরী প্রতিদিন বিকেলে ব্যালকনিতে আসেন। কানাডায় মুক্তভাবে জীবনযাপন করলেও প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় তার দেখা পাওয়া গেল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নূর চৌধুরীর কানাডায় পলাতক থাকা এবং খুনের দায়ে সাজা বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসের বিভিন্ন তৎপরতা দেখা যায়।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কানাডা খুনিদের মানবাধিকার দেখছে কিন্তু আমার বা আমাদের স্বজনদের মানবাধিকার দেখছে না। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।
বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যার পর বিভিন্ন দেশে কূটনীতিকের চাকরি করেন নূর। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে হংকং থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যান। এমনকি ২০০২ সালে কানাডা সরকার তার (নূর চৌধুরী) উদ্বাস্তু হওয়ার বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে। তখন বলা হয়, ন্যায়বিচার থেকে পলাতক (fugitive from justice) রয়েছে নূর চৌধুরী।
সেখানে আদালত আরও বলে, সহজভাবে দেখা যায় নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। তারপর ২০০৬ সালে আবারও শরণার্থী আবেদন করলে, তা নাকচ করে তাকে দেশত্যাগের নির্দেশ দেয় কানাডা। কিন্তু এরপর উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন আবেদন করেন নূর চৌধুরী। আবেদনে দেশে ফিরলে মৃত্যুদণ্ড হবে জানিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নের আবেদন জানায় কানাডীয় আদালতে। কানাডার মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থানের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখন সেখান অবস্থান করছেন তিনি।
সিবিসি টেলিভিশনের প্রতিবেদক যখন গাড়িতে যাওয়া নূর চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিবেদনে দেখা যায় ১/২ সেকেন্ড সময় চান প্রস্তুত হতে, পরক্ষণেই গাড়ি টান দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে প্রতিবেদককে প্রাক্তন কানাডীয় বিরোধী দলীয় নেতা ও মন্ত্রী স্টকওয়েল ডে বলেছেন, এটা ৫০ বছর আগের ঘটনা হলেও সুরাহা হওয়া উচিত। প্রতিবেদনটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলার আইনজীবী ও বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দের বরাতে ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে দেখানো হয়, কীভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল নূর চৌধুরী।